আল-কুরআনের সর্বশেষ সুরা হচ্ছে সূরা আন-নাস। এটি পবিত্র কুরআনের ১১৪ তম সূরা। এ সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়। এর আয়াত সংখ্যা ৬টি।
এ সূরায় র্যা (আন-নাস) শব্দটি মোট পাঁচবার ব্যবহৃত হয়েছে। সুরায় ব্যবহৃত এ النَّاسُ শব্দ থেকেই এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরা আল-ফাতিহায় আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা হয়েছে। তারপর তার নিকট সরল পথের সন্ধান চাওয়া হয়েছে। অতঃপর কুরআনের অন্যান্য সূরায় মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শয়তান মানুষকে সঠিক পথ থেকে বিরত রাখতে চায়। তাই সবশেষে এ সূরায় আল্লাহ পাকের নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়। এভাবে কুরআনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়েছে।
শব্দার্থ
قل - আপনি বলুন; তুমি বলো।
أَعُوذُ - আমি আশ্রয় চাই, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমি শরণ নেই।
رب - রব, প্রতিপালক।
الناس - মানুষ, মানবজাতি।
مَلِكِ - মালিক, অধিপতি।
اله - মাবুদ, উপাস্য।
شر - অনিষ্ট, ক্ষতি।
الْوَسْوَاسِ - কুমন্ত্রণাদাতা।
يُوَسْوِسُ - সে কুমন্ত্রণা দেয়।
صُدُورِ - বক্ষসমূহ, অন্তরসমূহ।
الْجِنَّةِ - জিন।
অনুবাদ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
১. আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের নিকট।
مَلِكِ النَّاسِ
২. মানুষের অধিপতির নিকট।
اله النَّاسِ
৩. মানুষের ইলাহ এর নিকট।
مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ
৪. আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতা (শয়তান)-এর অনিষ্ট থেকে।
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ
৫. যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।
مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
৬. জিন এবং মানুষের মধ্য থেকে।
ব্যাখ্যা
সূরা আন-নাস-এর আয়াতসমূহে দুই প্রকারের আলোচনা রয়েছে। প্রথম তিন আয়াতে মহান আল্লাহর তিনটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো রব, মালিক ও ইলাহ। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালাই মানুষের রব, মালিক ও ইলাহ। তিনি ব্যতীত আর কেউ এ তিনটি গুণের অধিকারী নয়। মানুষ হলো তার বান্দা। সুতরাং মানুষের উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। এভাবে সূরার প্রথম অংশে আল্লাহ তায়ালার তিনটি গুণের উল্লেখ করে তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।
সূরার দ্বিতীয় অংশে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার জন্য মহান আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা হয়েছে। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। সে গৌপনে, প্রকাশ্যে, ঘুমন্ত অবস্থায়, জাগ্রত অবস্থায় সবসময় মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। তার কাজই হলো কুমন্ত্রণা দিয়ে মানুষের অন্তরকে বিপথগামী করা। মানুষ যেন আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যায়, তার ইবাদত না করে ইত্যাদি কুমন্ত্রণা শয়তান দিয়ে থাকে। শয়তান শুধু জিনই নয় বরং মানুষের মধ্যেও শয়তান রয়েছে। মানুষ শয়তানও অন্যকে প্রতারিত করে, দীন থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। এসব শয়তান থেকে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় ব্যতীত বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এজন্য এ সুরায় শয়তানের সকল কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
নৈতিক শিক্ষা
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতিপালক। তিনিই আমাদের মাবুদ। আমাদের সকল কিছুই তার দান। তিনিই সমগ্র বিশ্বজগতের প্রকৃত অধিপতি। সুতরাং তার আদেশ-নিষেধ আমরা সবসময় মেনে চলব। আর শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকব। কেননা শয়তান মানুষকে অন্যায়, অনৈতিক ও অশ্লীল কাজের দিকে পরিচালনা করে। ফলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকতে পারলে অনৈতিক কাজ থেকেও বেঁচে থাকা যাবে।
| কাজ: শিক্ষার্থী পাশের বন্ধুকে সূরা আন-নাসের অর্থ ও নৈতিক শিক্ষা শোনাবে। | 
Read more